রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
লোকমান হাকিম : মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জমি মালিকদের সাথে কক্সবাজার জেলাপ্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চলমান জটিলতার অবসান হয়েছে। বন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করাজমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে একরে ২৪ লাখের পরিবর্তে ৫৫ লাখ ৪ হাজার টাকা করে পাবেন মালিকরা।এ জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মালিকদের নোটিশ দেয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। নোটিশ অনুযায়ী আগামী ৬ মার্চের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় জমি মালিকদের হাজির হতে বলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চাহিদার ভিত্তিতে মহেশখালীর ধলঘাটা মৌজার বনজামিরা ঘোনা ও নাছির মোহাম্মদ ডেইল এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকানা রয়েছে ২২৯ জন। সেখানে ২০০ পরিবার বাস করে। জমিগুলো নাল শ্রেণির নির্ধারণ করে গত বছরের ২ জুন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে ভূমির মূল্য বাবদ ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৫ টাকার চেক প্রদান করেন।
এরপর জেলা প্রশাসন কর্তৃকজমির মালিকদের ডাকা হলে শ্রেণী নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা ভুমিমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে শ্রেণি জটিলতা সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণ-২ এর উপসচিব মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গত বছরের আগস্টে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। এ কমিটিতে কক্সবাজারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো, সংশ্লিষ্ট প্রত্যাশী সংস্থার প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়। কমিটির কর্মকর্তারা গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দু’দিন সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছিপ্রকল্প এলাকার জমিগুলোতে ৬ মাস লবণ চাষ এবং বাকি ছয় মাস চিংড়ি চাষ হয়। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে জমিগুলো লবণ মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করে সুপারিশ করি।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ জানান, ‘ভূমির মূল্য বাবদ দু’দফায় ১৬২ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ২৭১ টাকার চেক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যদিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ আরো একধাপ এগোলো।’
জমি মালিক সাজেদ হোসেন চৌধুরী ও সাহাব উদ্দিনসহ অনেকে জানান, ‘জমিগুলো নাল শ্রেণির গণ্য করে একরে মূল্য ধরা হয় ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে আসছিলাম অধিগ্রহণকৃত এই জমি নাল নয়। এগুলো লবণ মাঠ। তাই আমরা ক্ষতিপূরণ বাবদ নাল জমি হিসেবে টাকা গ্রহণ করতে রাজি ছিলাম না। পরবর্তীতে সবাই মিলে ভূমিমন্ত্রীকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করি। বর্তমানে একরে ৫৫ লাখ ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট।’
ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘নাল জমি হিসেবে অধিগ্রহণ করায় জমি মালিকরা পেত একর প্রতি ২৪ লাখ টাকা। এখন পাবে একর প্রতি ৫৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। এতে জমি হস্তান্তর করা পরিবারগুলো আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। পাশাপাশি জমিতে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন, লবণ শ্রমিক ও জেলেদের তালিকা করে এককালীন অনুদান প্রদানের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ। এই বন্দরে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
নির্মিতব্য গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২,৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২,৬৭১ কোটি টাকা। প্রকল্প নির্মানের মেয়াদ ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চ্যানেল ও জেটি। চলতি মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভিড়েছে ৬০টি জাহাজ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষে জেটি ও চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply